মোঃ জয়নাল আবেদীন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজছাত্র মিলন হোসেন (২৩)’কে অপহরণের ২৬ দিন পর তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সিজান ও মুরাদের বাড়িঘর ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে অভিযুক্ত সিজান আলীর বাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর এবং বেলা ১১টার পর আরেক অভিযুক্ত মুরাদের বাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় সিজান ও মুরাদের পরিবারের সদস্যরা পলাতক ছিলেন।
অন্যদিকে মিলন হোসেনের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেন মিলনের স্বজনরা ও এলাকাবাসী। পরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইসরাত ফারজানা মিলন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন তাদের।
এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ত্যাগ করে চৌরাস্তায় এসে অবস্থান নেন এবং বিক্ষোভ করেন নিহতের স্বজনরা। এতে প্রায় ঘণ্টার বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে আবারও জেলা প্রশাসক চৌরাস্তায় এসে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে আশ্বাস দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
নিহত মিলন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের শিবগন্জ চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে। মিলন দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ছিলেন। তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা ও এলাকাবাসী।
বুধবার (১৯ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের জামালপুর ইউনিয়নের মহেশপুর বিটবাজার এলাকায় অপহরণকারীর বাসার পেছনের পরিত্যক্ত টয়লেটের ট্যাংকির নিচ থেকে মিলনের মরদেহটি উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এর আগে রাত ১০টার দিকে সন্দেহভাজন ২ জন ও পরদিন আরো একজনকে আটক করে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন– ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মহেশপুর বিটবাজার এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সিজান আলী (২৮), আরাজি পাইকপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ হোসেন (২৫) ও সালন্দর ইউনিয়নের শাহীনগর তেলিপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে মোছাঃ রত্না আক্তার রিভা (১৯)। এ সময় মুরাদের হেফাজত থেকে ৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
জানা গেছে, ফেসবুকে অজ্ঞাত একজনের যোগাযোগ হয় মিলন হোসেনের। একপর্যায়ে সেই ব্যক্তি মিলন হোসেনকে দেখা করার কথা বলেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দেখা করার জন্য পীরগঞ্জ থেকে জেলা শহরের মুন্সিরহাট পলিটেকনিক্যালের পেছনে একটি লিচু বাগানে যান মিলন। এরপর রাতে মিলন বাড়িতে না এলে তার বড় ভাই হামিদুর রহমান মিলনের মুঠোফোনে কল করলে ফোন বন্ধ পান মিলনের। মিলনকে ফোনে না পেয়ে তার ভাই পরিবার ও এলাকার লোকজনকে অবগত করলে সবাই মিলে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কিন্তু কোথাও সন্ধান পায়নি মিলনের। ওই দিন রাত ১টার দিকে মিলনের বাবাকে ফোন করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মিলনের অপহরণের বিষয়টি জানিয়ে বলে মিলন তাদের হেফাজতে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৩ লাখ পরে ৫ লাখ এবং বাড়িয়ে ১০ -১৫ শেষে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা।
পরে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে মিলনের পরিবার। অপহরণের তিন দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি মিলনকে হত্যা করেন অপহরণকারীরা। হত্যার পরও মিলনকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ হাতিয়ে নেয় অপহরণকারী চক্রটি। একপর্যায়ে মিলন হোসেনকে উদ্ধারে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সিজান ও মুরাদকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামি সিজানের বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত টয়লেটের স্লাবের ভেতর থেকে বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মাটি খুঁড়ে অপহৃত মিলনের মরদেহ উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে আরেক আসামি রত্না আক্তার ইভাকে আটক করে। ধারণা করা হচ্ছে অপহৃত মিলন অপহরণকারী চক্রকে চিনে ফেলায় তারা মিলনকে হত্যা করেছে।