নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বরগুনায় এক রাতে পৃথক দুই স্থানে ধর্ষণ মামলার বাদিসহ ২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১২ মার্চ) বরগুনা সদর উপজেলার দুটি পৃথক স্থান থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুটি ঘটনায় নিহতরা হলেন-বরগুনা পৌর শহরের কড়ইতলা এলাকার বাসিন্দা মন্টু দাস ও বদরখালী ইউনিয়নের মিরাজ মুন্সি। নিহতদের মধ্যে মন্টু দাস তার মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার বাদি ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাত ১ টার দিকে বরগুনা সদরের প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন ঝোঁপ থেকে মন্টু চন্দ্র দাস (৩৫) নামে এক যুবকের কাদামাখা মরদেহ উদ্ধার করেছে বরগুনা পুলিশ। মন্টু চন্দ্র দাস বরগুনা পৌরশহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালীবাড়ি কড়ইতলা এলাকার মৃত জয়েশ্বর দাসের ছেলে।
নিহত মন্টু দাসের স্বজনরা জানায় , মন্টু দাস নির্ধারিত সময়ে বাড়িতে না আসায় তার মোবাইল ফোনে কল দিলে বাড়ির পেছনে পুকুর পাড়ে মোবাইলের আওয়াজ শুনতে পায় তারা। পরে সেখানে গিয়ে মন্টুর মরদেহ দেখতে পান। এ সময় মন্টুর পরনের কাপড় ভিজা ছিল, হাতে কামড়ের দাগ ও সারা শরীরে কাদা মাখা অবস্থায় ছিল। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহতের স্বজনরা জানায়, কয়েকদিন আগে নিহত মন্টুর বড় মেয়ে স্থানীয় বখাটেদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের ঘটনায় মন্টু দাস বাদী হয়ে গত (৫ মার্চ) বরগুনা সদর থানায় মামলা দায়ের করে। এ মামলায় একইদিন মামলার প্রধাণ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই মন্টু ও তার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল অভিযুক্তরা। ১২ মার্চ ওই মামলার নির্ধারিত তারিখ ছিল।
নিহতের স্ত্রী শিখা রাণী দাস বলেন, রাতে আমাকে কল দিয়ে জানায় আসতে দেরি হবে। পরে রাত গভীর হয়ে আসলেও বাসায় ফেরেনি। পরে তার ফোনে কল দিতে থাকলে ঝোপের মধ্যে মোবাইলের রিংটোন বাজতে শুনি। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
বরগুনা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, মন্টুর সাথে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। ওর সাথে কারো কোনোদিন তর্কও হয়নি তিনি অত্যন্ত সহজ সরল মানুষ। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ফাঁসি চাই।
অন্যদিকে দিবাগত রাতে বরগুনার সদর, উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের কুমারখালি গ্রামের ডালখেতের পরিত্যাক্ত জায়গায় মিরাজ মুন্সি (৪৫) নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত মিরাজ মুন্সি বদরখালী ইউনিয়নের বাওয়ালকর গ্রামের মৃত নবী হোসেনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে কুমড়াখালি গ্রামের লোকজন ডালখেতে কাজের উদ্দেশ্যে বের হলে খেতের মাঝখানে পরিত্যক্ত একটি ঝোপের পাশে মিরাজের মরদেহ দেখতে পায়। পরে এলাকাবাসির চিৎকারে ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে আমি এবং সদর সার্কেল ঘটনাস্থলে যাই। প্রাথমিক সুরাতহালে বিষয়টি হত্যাকাণ্ড বলে মনে হয়েছে। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে মন্টুকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিষয়টা বিবেচনায় রেখেছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে মন্টুর ও মিরাজের মরদেহ উদ্ধার করি। প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ড হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।