নরওয়েতে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর ২৩ জনের মৃত্যু
নরওয়েতে ফাইজার/বায়োএনটেকের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদানের কয়েক দিনের মধ্যে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের সবাই বয়স্ক এবং অনেকেই আগে থেকে নার্সিং হোমে ভর্তি ছিলেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, মূলত ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ছাড়াও আরো ৯ জনের মধ্যে গুরুতর এবং ৭ জনের মধ্যে সামান্য উপসর্গও দেখা গেছে। এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক পোস্ট।
নরওয়ে মেডিসিন এজেন্সির প্রধান চিকিৎসক সিগার্ড হোর্টেমো জানান, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর সাধারণ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে জ্বর ও বমি বমি ভাব। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এগুলোই প্রাণনাশক হয়ে উঠেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি একটি বিবৃতি দেন।
তবে দেশটির কর্মকর্তারা এখনো এ ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। তারা শুধু ভ্যাকসিন প্রয়োগের নির্দেশনায় বদল এনেছেন। এখন থেকে বয়স্ক ও দুর্বল রোগীদের ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নরওয়ের চিকিৎসকদের।
গত মাস থেকে নরওয়েতে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। হঠাৎ করেই দেশটিতে এখন আলোচিত হচ্ছে ভ্যাকসিনে মৃত্যুর বিষয়টি। এ নিয়ে নরওয়েজিয়ান মেডিসিনস অ্যাজেন্সি’র মেডিক্যাল ডিরেক্টর স্টেইনার ম্যাডসেন বলেন, এটি কাকতালীয় ব্যাপারও হতে পারে, আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তাদের মৃত্যু ভ্যাকসিনের সাথে সম্পর্কিত এব্যাপারে এখনো নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি। এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে। এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে জ্বর, বমিভাব ও ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। হয়ত কিছু বয়স্ক ও দুর্বল রোগীদের মারা যাওয়ার পেছনে এই উপসর্গের ভূমিকা আছে। যেসব সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তরুণ ও সুস্থসবল রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয় বয়স্কদের ক্ষেত্রে তাই ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। ম্যাডসেন আরো বলেন, আমরা এব্যাপারটি নিয়ে চিন্তিত নই, এধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু বয়স্ক ও গুরুতর রোগে ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে। আমরা চিকিৎসকদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। তবে আগে থেকেই গুরুতর অসুস্থ ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা আছে এমন রোগীদের ভ্যাকসিনের প্রদানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্যায়নের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
নরওয়ের ওষুধ সংস্থা জানিয়েছে, ভ্যাকসিন দেয়ার পর দেশটিতে ২১ জন নারী এবং আটজন পুরুষের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। এছাড়া আরো ৯ জনের মধ্যে প্রবলমাত্রার এলার্জি, অস্বস্থি এবং জ্বর দেখা গেছে। আরো ৭ জনের ভ্যাকসিন প্রদানের স্থানে প্রচণ্ড ব্যাথার কথা জানা গেছে।
নরওয়েতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ। এরমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ শতাধিক। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, নার্সিং হোমগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থাতেই প্রতি সপ্তাহে ৪০০ মানুষ মারা যান। সাম্প্রতিক এসব মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ফাইজার জানিয়েছে যে তারাও এ স¤পর্কে অবহিত। তারা এখন এ সম্পর্কিত সকল তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের চেষ্টা করছে। ইসরাইলে ২ মিলিয়নেরও বেশি নাগরিককে এই ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। এরইমধ্যে সেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসার পেছনে ভ্যাকসিনের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া গেছে।